
শিব্বির আহমদ রানা::: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে আদার বাণিজ্যিক চাষ। অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির কারণে চলতি মৌসুমে আদার ফলন হয়েছে আশাতীত, যা চাষীদের মুখে ফিরিয়েছে হাসি। উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকা বিশেষ করে পুকুরিয়া, সাধনপুর, বৈলছড়ী, পৌরসভা, সরলের জঙ্গল পাইরাং, পূর্ব শীলকূপ, চাম্বল ও নাপোড়ায় ব্যাপকভাবে আদার চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে বাঁশখালীতে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের পাহাড়ি আদা চাষ হয়েছে। এখানে সহস্রাধিক লোক আদা চাষে সাবলম্বী হচ্ছে।
অপেক্ষাকৃত উঁচু ও পতিত জমিতে কম সার ও কম পরিশ্রমে আদা চাষ করা যায়। ফলে পাহাড়ি এলাকায় মসলা জাতীয় এ ফসলটি চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, হেক্টরপ্রতি ২১ থেকে ২২ মেট্রিক টন আদা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবছর তার চেয়ে বেশী ফলন হয়েছে এ উপজেলায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আদা একটি দামী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা ফসল। রান্নার পাশাপাশি ভেষজ গুণাগুণের কারণে ওষুধশিল্পেও এর চাহিদা ব্যাপক। দেশে উৎপাদনের ঘাটতির কারণে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আদা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোহছন আলী বলেন, ‘এ বছর বাঁশখালী উপজেলায় মোট ১২০ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে। শুধু পৌরসভা এলাকাতেই প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে আদা আবাদ হয়েছে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আদা রোপণ করা হয় এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে তা সংগ্রহ করা হয়। আমরা মাঠপর্যায়ে চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

জঙ্গল পাইরাং মুহুরীপাড়া এলাকার আদা চাষি মো. সেলিম বলেন, ‘আমি এ বছর পাহাড়ি এলাকায় তিন কানি জমিতে আদার চাষ করেছি। প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে পাইকারিতে সাড়ে সাত লাখ টাকায় আদা বিক্রি করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আগামী মৌসুমে পাঁচ কানি জমিতে আদা চাষের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের পৌরসভা এলাকায় (ব্লকে) শতাধিক মানুষ আদা চাষের সঙ্গে জড়িত।’
অন্য চাষিরা জানান, বাজারে পাইকাররা কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে আদা কিনে খুচরা বাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। ফলন ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষীরা।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকা আদা চাষের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি কৃষি অঞ্চল। প্রতি বছরের মতো এবারও এখানে আদার চাষ হয়েছে এবং ফলন সন্তোষজনক। আদা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বাজারে ভালো দাম নিশ্চিত হলে চাষীরা আরও বেশি উপকৃত হবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মাধ্যমে কৃষকদের রোগবালাই দমন ও আধুনিক চাষপদ্ধতি বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদন ও লাভ-দুটোই বাড়ছে। বাসা বাড়িতেও চাইলে খোলা জায়গায় নিজের চাহিদা মতো বস্তায় আদার চাষ করা যায়। সেভাবেও আমরা উৎসাহ ও পরামর্শ দিচ্ছি।’
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের আশাবাদী, সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা ও সহায়তা পেলে বাঁশখালীর পাহাড়ি আদা ভবিষ্যতে দেশের মসলা চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
