1. news@banshkhalisanglap.com : বাঁশখালী সংলাপ : বাঁশখালী সংলাপ
  2. info@www.banshkhalisanglap.com : বাঁশখালী সংলাপ :
শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাঁশখালীতে ঋষিধাম মহারাজের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম বাঁশখালীতে অগ্নিদুর্গত পাঁচ পরিবারের মাঝে জামায়াতের অর্থ সহায়তা চাম্বল খাদিজাতুল কোবরা মহিলা দাখিল মাদরাসার এডহক কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ইসমাইল “শীলকূপ” শাহ আমিনিয়া সড়ক সংস্কার চাই বাঁশখালীতে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত গোপনীয়তার দেয়াল ভেঙে সহিংসতার মঞ্চে ফেসবুক স্বর্ণের প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদে ‘আবদুছ সবুর’ এর গল্প মাধ্যমিকে স্কুল পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম গুণী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত মাদরাসা পর্যায়ে বাঁশখালীর গুণী শিক্ষক নির্বাচিত হলেন মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ওয়াশরুমে আটকা পড়া স্কুলছাত্রীকে বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান

আজ বাঁশখালীর কৃতি ফুটবলার ছোটনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৩১৪ বার পড়া হয়েছে

শিব্বির আহমদ রানা::
আজ বাঁশখালীর সম্ভাবনাময়ী তরুণ ফুটবলার ও দক্ষ সংগঠক মোজাফ্ফরুল ইসলাম ছোটনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের আজকের এইদিনে মাষ্টার্সের পরিক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশখালী আসার পথে সিএনজি-ট্রাক সংঘর্ষে পটিয়ার শিকলবাহ ক্রসিং এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ছোটন।

বাঁশখালীর শিলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর গ্রামের ৮নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম ছিদ্দিক আহমদ এর ছোট ছেলে ছোটন।

=কে এই ছোটন=

একজন শিল্পী ছোটন: বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন তরুণের নাম ছোটন। তাকে কেবল অনেকেই খেলোয়াড় হিসেবে চিনে। তিনি একজন সংস্কৃতিমনা ছিলেন। বাঁশখালী থ্রী স্টার শিল্পীগোষ্ঠির একজন অন্যতম শিল্পী ছিলেন। কয়েকটি ক্যাসেটে তার ইসলামীক সঙ্গিত নিজের কন্ঠে ও সুরে মাতিয়েছেন। ভালো একজন অভিনয় শিল্পী ছিলেন বাঁশখালীর এই কৃতি সন্তান মোজাফ্ফরুল ইসলাম ছোটন। অপসংস্কৃতি দূরিকরণে তার এই শিল্পজগৎতে আসার কথাও জানান জিবদ্ধশায়। বাঁশখালীর সন্তান সারাদেশে পরিচিত লাভ করেন নানা মুখী প্রতিভার জন্যে।

ফুটবলার ছোটন: বাঁশখালীর এমন কোন মাঠ নেই যে মাঠে ছোটন ফুটবল খেলেনি। তার কিছু ভক্ত রয়েছে যারা ছোটন খেলতে আসছে বললেই দর্শকরা মাঠে জমাতো ভীড়। তরুণ এই ফুটবলারের নাম বাঁশখালীর জনে জনে। খুব ছোট বেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ছিলো তার একনিষ্ট মনযোগ। খেলাধুলার সাথে তার সম্পর্কটা অন্যরকম। অসাধারণ একজন প্রতিভাবন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে বাঁশখালীর জনে জনে পরিচিত পায় সে। ছোটন বিভিন্ন খেলায় এ পর্যন্ত পাঁচশতাধিক ক্রেস্ট সহ অসংখ্য কাপ জিতেছে।

যেভাবে ফুটবলে হাতেকড়ি তার: এই ফুটবলারের প্রথম কোচ ছিলেন জাতীয় ফুটবল তারকা আসকর খান বাবু। সে দ্বিতীয় কোচ হিসাবে কাছে পেয়েছিলেন জাতীয় ফুটবল তারকা শওকত খান বাবুকে ।তা ছাড়া চট্টগ্রামের সফল কোচ আলী স্যার, আব্দুল হান্নান মিরন স্যার, টিপু স্যার, লেদু স্যার, আব্বাস উদ্দীন কালু স্যার, কাইচার স্যার, আনোয়ার স্যার, ইব্রাহীম স্যার, ঢাকা বিভাগের কোচ কামাল বাবু, আলমীর উস্তাদ, সাহাব উদ্দীন স্যার সহ আরো অসংখ্য কোচের প্রশিক্ষণ পায় তরুণ এই ফুটবলার। কোচ আসকর খান বাবু তরুণ ফুটবলার ছোটনের প্রতিভা দেখে তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। বাঁশখালী ছাড়িয়ে জিবনের প্রথম দোহাজারী আবাহনীতে খেলেন। এবং এখান থেকে তার নতুন এক যাত্রার শুরু হয় ফুটবল জগতে।

ছোটনের অর্জন: এক পর্যায়ে যথেষ্ট সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তার। সে চট্টগ্রামের পুলিশ লাইন মাঠে বাঁশখালীর প্রতিনিধি হয়ে “পাইওনিয়ার ফুটবল” খেলে। ২০০৯ সালে “চট্টগ্রাম মেয়র কাপ” খেলে জামালখান ২১নং ওয়ার্ডের পক্ষে হয়ে। সে খেলায় দুই (২) গোল ছিলো তার। (২০০৯-২০১০) সালে “চট্টগ্রাম পাইওনিয়ার ফুটবল” খেলে চট্টগ্রাম ব্লুস্টার ক্লাবের পক্ষ হয়ে। এই খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে কাপ জিতে তার দল। (২০১১-২০১২) সাল পর্যন্ত “মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবে” দ্বিতীয় বিভাগে দুই বছর যাবৎ খেলে।

যেভাবে ঢাকার পথে ছোটন: এর পর শুরু হয় তার ঢাকার পথে যাত্রা। যার পেছনে অবদান ছিলো জাতীয় ফুটবল তারকা শিমুল খান বাবুর । তিনি তাকে ঢাকা প্রথম বিভাগে ঢাকা ওয়ান্ডারাস ক্লাবে পাঠিয়েছিলেন। তার ঢাকার প্রথম কোচ বর্তমান ঢাকা রহমতগঞ্জ ক্লাবের সফল কোচ কামাল বাবু। সে (২০১২-২০১৪) এর মধ্যে “ঢাকা ওয়ান্ডারাস”এ খেলে।(২০১৩-২০১৪) সালে “চিটাগাং কর্ণফুলী ক্লাব” খেলে এবং তার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে মাতার বাড়ী মুক্তকন্ঠ ক্লাবে প্রথম বিভাগে ফুটবল খেলে। এভাবে ছোট বেলা থেকে তার কৃতি ধরে রাখে।

দক্ষ সংগঠক স্বপ্নবাজ তরুণ ছোটন: বাঁশখালীর এই তরুণ ফুটবলার নিজের উদ্যোগে বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফুটবল প্রতিভা গুলোকে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে নিরলস পরিশ্রম করেছিল। তার মতে আজকে যারা জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলছে তারা সবাই এভাবে গ্রাম থেকে উঠে এসেছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ফুটবল জগতে এক বিরাট প্রতিভার স্বাক্ষর রাখবে বলে তার অকুণ্ঠ ধারণা ছিল। বাঁশখালী নিয়ে তার স্বপ্ন জাতীয় লীগের তারকার তৈরি করা এবং এই প্রচেষ্টায় তার গড়া “বাঁশখালী থ্রি স্টার ফুটবল একাডেমী” কাজ করে গিয়েছিল। সে বলতেন বাঁশখালীতে এটিই একমাত্র প্রথম ফুটবল একাডেমী। যেখানে নিয়মিত প্র্যাকটিস দেওয়া হতো অসংখ্য প্রশিক্ষণার্থীদের।

ফুটবল প্রেমী অনেক অভিবাবক তাদের সন্তানদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য এই একাডেমিতে ভর্তি করান। একাডেমীর অধিনে বর্তমানে নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছে প্রায় (১০০-১৫০) জন ব্যাচ আকারে । এখান থেকে চট্টগ্রাম লীগে ৩য় বিভাগে (২০১৪-২০১৫) এ ১২ জন ফুটবলার খেলে। এতে “বাঁশখালী থ্রি স্টার ফুটবল একাডেমী” থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৪ জন ফুটবলার ছিলো স্টার ক্লাবের ৩য় বিভাগের চ্যাম্পিয়ন। তা ছাড়া কিশোর লীগ থেকে শুরু করে প্রিমিয়ারলীগ পর্যন্ত তার একাডেমীর অসংখ্য খেলোয়াড় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। তার হাতে গড়া বাঁশখালী তথা সব জায়গায় ফুটবল প্রতিভাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেকে। তার মধ্যে কয়েকজন সেরা ফুটবলার হলো- হিরো (গোল কিপার), ফুটবলার মুন্না, সাহাদাত, নাজমুল, আমানুল, সদয়, বিপন, ফয়সাল (গোলকিপার, টিংকু, রাসেল, ইমরান, সাদেক (গোলকিপার), পুর্ণ, বাপ্পারাজ সহ প্রমূখ।

ছোটনের শিক্ষাজীবন: ফুটবলার ছোটন শিলকূপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। দাখিল পরিক্ষায় পাশ করেন জামিরজুরী রজবিয়া আজিজিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসা থেকে। পরবর্তী গাছবাড়ীয়া সরকারী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচ এস সি পাশ করেন। হাজ্বী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স শেষ করেন। বর্তমানে মাস্টার্সের পরিক্ষার্থী সে। তরুণ এই ফুটবলার পড়ালেখার পাশাপাশি ক্যারিয়ারের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ফুটবল খেলাকে।

তারুণ্য মনে একজন অভিবাবক ছোটন: সহজ সরল ও নম্র স্বভাবের এই তরুণ ফুটবলারকে স্থানীয়রা ছোটন বাবু বলে ডাকতেন। তার আসল নাম মোজাফ্ফরুল ইসলাম। ছোটন ছিল তার ডাক নাম। বাঁশখালীতে তার অসংখ্য ভক্ত আছে, আছে অগনিত শীর্ষ্য । তার হাতেগড়া একাডেমীতে প্রশিক্ষণরত ছাত্রদেরকে নিজের তদারকিতে পড়ালেখার কাজও চালিয়েছেন । বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের দেখাশুনা করে এবং অনেককে নিজ বাড়ীতেও পড়ার সু-ব্যবস্থা করতেন। ফুটবলকে সে মনেপ্রাণে লালন করেছেন। তার একাডেমীতে শির্ষ্যদের কাছে ছোটন ছিলেন একজন সফল অভিবাবক ও আদর্শ কোচ। সে প্রায় বলতেন, আমাদের বেশিরভাগ তরুণই নেশাগ্রস্ত, মদ্যপ। তাদেরকে ফিরিয়ে এনে খেলাধুলায় মনোনিবেশ করাতাম। খেলাধুলা মানুষকে অসমাজিক কাজ থেকে বিরত রাখে। তাই আমার একাডেমী খেলাধুলার পাশাপাশি নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হিসেবে তরুণদের পাশে সবসময়।

মিষ্টভাষী এই সদাহাস্যোজ্জ্বল তরুণ বাঁশখালীর সর্বস্তরের কাছে প্রিয়মুখ ছিলেন। বাঁশখালীবাসী স্বপরন দেখেছিলো সে জাতীয় দলে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখবেন। বাঁশখালীর এই প্রতিভা আজ আর নেই। ছোটন বন্ধুদের মাঝে ছিলেন একজন প্রাণচঞ্চল তরুণ। পড়শির কাছে ছিলেন একজন মুক্তবিহঙ্গ ও স্বচ্চ ফুলের পাপড়ি। শিক্ষকদের কাছে ছোটন ছিলেন একজন বিনয়ী শিক্ষার্থী। সর্বমহলের কাছে একজন প্রিয়ভাজন ছিলেন তরুণ এই ফুটবলার। মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শোকবার্তা। ছোটন আর নেই! ছোটন বাঁশখালী তথা বাংলাদেশের একজন অন্যতম প্রতিভা ও সম্পদ। তার হাতে গড়া ফুটবল একাডেমী যেন হারালো একজন অভিবাবক!

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট