শিব্বির আহমদ রানা: চরম ভোগান্তির আরেক নাম এখন বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ। বিশেষ করে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে শিক্ষা, গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে সুপেয় পানির সরবরাহ পর্যন্ত।
গত দুই দিন ধরে বাঁশখালীতে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের তথ্যমতে, দোহাজারী গ্রিডে সমস্যা বা ঝড়-বৃষ্টিতে গাছপালা পড়ে লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়। ফলে সাতকানিয়া হয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঝুঁকিপূর্ণ লাইনে ত্রুটি শনাক্ত করে মেরামতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা।
বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার চারটি সাবস্টেশনে (গুনাগরি, বৈলছড়ি, জলদি, নাপোড়া) মাত্র ৩৬ জন লাইনম্যান কর্মরত আছেন-যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে বাঁশখালীতে ৮৪ হাজার গ্রাহক এবং বিদ্যুতের চাহিদা ৩৬ মেগাওয়াট হলেও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। মূল সমস্যা তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দীর্ঘ লাইনে গাছপালা পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের একাধিক গ্রাহকের সাথে কথা বললে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, “আমরা টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনি, কিন্তু সামান্য বাতাস-বৃষ্টি হলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্ধকারে থাকতে হয়। পানির মোটর চলে না, বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ফোন দিলে অফিস থেকে শুধু বলে—দোহাজারী লাইনে সমস্যা। এত বছরেও কেন এই লাইনের স্থায়ী সমাধান হলো না, সেটা কেউ বলেন না!”
এ প্রসঙ্গে বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুতের এজিএম ডালিম কুমার জানান, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে সক্ষম হবো। সাতকানিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত লাইনের ওপর থাকা গাছপালা কেটে ফেললে ঝড়-বৃষ্টিতে তেমন সমস্যা হবে না।”
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “গাছপালা ছাঁটাই করতে গিয়ে বাঁশখালীতে লাইনম্যানদের মারধরের শিকার হতে হয়েছে, তাই স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে গাছ কাটার কাজ সম্পন্ন করার পর সেবা আরও উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।”
বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আতিকুর রহমান বলেন, “বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ৩৩ কেভি লাইনটি বাঁশখালী হয়ে দোহাজারী পর্যন্ত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়বৃষ্টির সময় লাইনে গাছের ডালপালা পড়লে পুরো দীর্ঘ লাইনটি চেক করা লাগে। আশা করছি শিগ্রই তার সমাধান হবে। গ্রাহক সেবা দিতে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই আমাদের।”