
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। শব্দটি সহজ হলেও এর দায়বদ্ধতা, ত্যাগ ও ঝুঁকি- সবচেয়ে বেশি। ‘কলম সৈনিক’ নামে পরিচিত সাংবাদিক সমাজের বিবেক। তারা জানেন, ঝুঁকি আছে; তবুও পেশাগত দায়িত্ব পালন করে চলেন- মানবতার কল্যাণে, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্পন্দন জাতির সামনে তুলে ধরতে।
কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- এই পেশার মানুষ আজও যথাযথ সম্মান ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলা, মামলা, এমনকি প্রাণহানির মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন সাংবাদিকরা। সামান্য একটি ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। অনেক সাংবাদিক আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তবুও মানুষের কল্যাণে কলম থামান না।
বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা সংবাদকর্মীর সংখ্যা অতি নগণ্য। তবুও এই সীমিত সংখ্যক মানুষ রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন জনকল্যাণে, গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা রক্ষায়। তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
তবে একথাও সত্য- এই মহান পেশাকে কিছু মানুষ কলুষিত করছে। বর্তমানে কিছু ব্যক্তি সাংবাদিকতার আড়ালে চাঁদাবাজি ও দলবাজির আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে নিরপেক্ষতার পরিবর্তে রাজনৈতিক আনুগত্যে যুক্ত হয়ে পেশাটির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি, আবার কেউ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ছায়ায় ব্যক্তিস্বার্থে কলম চালাচ্ছে। এরা প্রকৃত সাংবাদিক নয়- এরা পেশার মর্যাদা হরণকারী ‘দলবাজ সাংবাদিক’।
ফলে আজ পুরো সাংবাদিক সমাজের ওপর ছায়া পড়েছে অবিশ্বাসের, সৃষ্টি হয়েছে নৈতিক সংকট। অথচ সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি হলো সত্য, নিরপেক্ষতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। এই মৌলিক নীতিতে ফিরে না এলে সাংবাদিকতার মান ও মর্যাদা রক্ষা সম্ভব নয়।
এখন সময় এসেছে আত্মসমালোচনার- আমরা যারা কলম হাতে সমাজের চিত্র তুলে ধরি, আমাদের উচিত নিজেদের শুদ্ধ করা, দলীয় করণ ও স্বার্থবাদিতা ত্যাগ করা। সাংবাদিক সমাজ যদি সত্যিকার অর্থে ঐক্যবদ্ধ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে, তাহলে কেউ আমাদের দমন করতে পারবে না। সাংবাদিকতা আবারও ফিরে পাবে তার হারানো মর্যাদা, জাতি ফিরে পাবে সত্য ও বিশ্বাসের ভরসা।
আসুন- চাঁদাবাজি ও দলবাজি পরিহার করে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পথে ফিরে যাই। কলম হোক সত্যের প্রতীক, জাতির বিবেক।
✍️ মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের
সদস্য সচিব- বাঁশখালী প্রেস ক্লাব