1. news@banshkhalisanglap.com : বাঁশখালী সংলাপ : বাঁশখালী সংলাপ
  2. info@www.banshkhalisanglap.com : বাঁশখালী সংলাপ :
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

ভোটের আগে-ভোটের পরে: জনতা বনাম জনপ্রতিনিধি

  • প্রকাশিত: শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬০ বার পড়া হয়েছে

ভোট মানেই মানুষের প্রত্যাশা, স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎ বদলের একমাত্র বৈধ পথ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ভোটের আগে আর ভোটের পরে আমাদের বাস্তব চিত্র আকাশ-পাতাল ভিন্ন। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতির মেলা বসে। নেতা তখন হয়ে ওঠেন ভাই, বন্ধু, আত্মীয়, সর্বোপরি ‘জনতার সেবক’। প্রতিশ্রুতির ঝড় উঠে- “আমাকে একবার সুযোগ দিন, আমি আপনাদের উন্নয়নের কান্ডারি হবো।” গ্রামে-গঞ্জে মাইকের শ্লোগান, ঘরে ঘরে সালাম, চা-সিগারেট, আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নেতাজি। সরল বিশ্বাসে জনতা ভোট দেয়, নেতা বানায়। নির্বাচনের রাতে ফুল-মালা, মিষ্টি, ঢাকঢোল, জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয় চারপাশ। নতুন প্রতিনিধি গলায় মালা পরে যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন তিনি মাটির মানুষ, উন্নয়নের রূপকার।

কিন্তু ভোটের পরে ছবিটা একেবারে উল্টে যায়। তখন একটি জন্ম নিবন্ধন পেতে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন, সচিব বা জনপ্রতিনিধিকে পাওয়া যায় না একসাথে। সড়ক মেরামতের অনুরোধে জবাব আসে- ‘বরাদ্দ আসেনি।’ অথচ ভুঁয়া কাগজপত্রে বরাদ্দের টাকা উধাও হয়ে যায়। গ্রাম আদালতে বিচার চাইতে গেলে বলা হয় চৌকিদার-মেম্বারের কাছে টাকা জমা দিতে, তারপর দেখা যাবে। অথচ সেই বিচার আর শেষ হয় না। খবর নিলে দেখা যায়- বিগত জনপ্রতিনিধির আমলে জমা দেওয়া বিচার প্রার্থীদের টাকা পর্যন্ত ফেরত পাননি অসংখ্য মানুষ।

এটাই আমাদের জনপ্রতিনিধিত্বের নির্মম বাস্তবতা। ভোটের আগে নেতা সালাম দিতে দৌড়ান, ডেকে ডেকে বুকে জড়ান। লালচা-বিস্কুটের আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকেন। ভোটের পরে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অপরিচিত। দেখা হলে চোখ ফিরিয়ে নেন, না চেনার ভান করেন। জনতার কণ্ঠস্বর তখন তার কাছে অবাঞ্ছিত। আর উন্নয়ন? স্লোগানে উন্নয়নের ঢল থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় পাহাড় কাটা, বালি উত্তোলন, বন নিধন, গরীবের চাল-ডাল আত্মসাৎ, রিলিফ কার্ড দলীয় ভিত্তিতে ভাগাভাগি। ভোটারদের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয় দলীয় স্বার্থের আড়ালে। জনতার অধিকার হয়ে ওঠে বেচাকেনার পণ্য।

তবুও আমরা অস্বীকার করতে পারি না- এ দেশে এমন নেতা ছিলেন, আছেন, যারা আমৃত্যু জনতার সেবক হয়েই থেকেছেন। কেউ কেউ তিন-চার যুগ ধরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন মানুষের ভালোবাসায়। তারা জনতাকে প্রতারিত করেননি, বরং বিপদের দিনে ছুটে গেছেন সাধারণ মানুষের ঘরে। জনতা তাদের প্রতি আস্থা রেখেছে, সম্মান দিয়েছে। আবার এমনও অনেক নেতা আছেন, যারা ক্ষমতার মোহে জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন, দুর্নীতি আর প্রতারণার কারণে জনতার অভিশাপ কুড়িয়েছেন। দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়েছেন।

আজ আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজন প্রকৃত সেবক-নেতা। এমন নেতা চাই, যিনি জনতার দুঃখ-কষ্ট নিজের কষ্ট মনে করবেন। নেতা মানে শুধু বক্তৃতা নয়- নেতা মানে মাঠে থাকা, জনতার মাঝে থাকা, জনতাতেই মিশে যাওয়া। আমরা চাই এমন নেতা, যিনি সরকারি বরাদ্দকে নিজের পকেট ভরার যন্ত্র নয়, উন্নয়নের হাতিয়ার বানাবেন। যিনি বিচার প্রার্থীর কাছে ঘুষ চাইবেন না, বরং ঘরে ঘরে গিয়ে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেবেন। যিনি শুধু নির্বাচনী মৌসুমে নয়, সারা বছর জনগণের পাশে থাকবেন। মনে রাখতে হবে- জনতা বোকা নয়। আজ নয়, কাল জনতা হিসাব চাইবেই। জনতা সুযোগ বুঝে আপনাকে ক্ষমতার চেয়ার থেকে টেনে নামাতে জানে। জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে নেতার হাজারো অজুহাতও তাকে রক্ষা করতে পারে না।

আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু সেই উন্নয়ন যেন জনতার রক্তচক্ষু হয়ে না দাঁড়ায়। কেবল সঠিক বরাদ্দ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলেই দেশ এগিয়ে যাবে। দেশ সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো উন্নত হবে কেবল তখনই, যখন স্থানীয় স্তরে জনগণের করের টাকায় প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

পরিশেষে বলা যায়, নেতার আসল পরিচয় কথায় নয়, কর্মে। ক্ষমতার মোহে ভুলে গেলে চলবে না- জনতাই আপনাকে নেতা বানায়, আবার জনতাই আপনাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে। তাই আসুন, আমরা নেতাদের কাছ থেকে ন্যায্য হিসাব চাই, আর নেতারা প্রকৃত সেবক হয়ে উঠুন। তাহলেই বদলে যাবে সমাজ, বদলাবে দেশ।

শিব্বির আহমেদ রানা
(লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী)
ই-মেইল: shibbirahmedctg1990@gmail.com

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট