সমাজে বহু বছর ধরেই কিছু ঘৃণ্য প্রথা আমাদের সংস্কৃতির নামে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। এই অপসংস্কৃতিগুলো সমাজের শরীরে এমন এক ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে, যা এখনই রোধ না করলে পুরো জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। এ অবস্থার পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে তরুণ প্রজন্ম। যেমনটা একসময় করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ চালু করে সমাজে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও যৌতুকবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। অথচ আজকের বাংলাদেশে এই প্রথাগুলোর অনেকটাই রূপ পরিবর্তন করে টিকে আছে, বিশেষ করে যৌতুক নামক ব্যাধি। এমনকি আধুনিক, শিক্ষিত সমাজেও এটি কোনো না কোনো রূপে টিকে আছে, যা নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক এবং নির্মম বাস্তব। যৌতুকের কারণে ভেঙে গেছে বহু সংসার, নিঃশেষ হয়েছে অসংখ্য সম্ভাবনা।
মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় এখনও অভিভাবকদের বড় অঙ্কের অর্থ বা উপহার দিতে হয়। এটিকে অনেকে “উপহার” বললেও প্রকৃতপক্ষে এটি পুরুষতান্ত্রিক চেতনায় গড়া এক ভয়াবহ মানসিক ও সামাজিক নির্যাতন। বিয়ের পরেও মেয়ের পরিবারকে নানাভাবে চাপে রাখা হয় — ঈদ বা উৎসব এলে মেয়ের স্বামীর পরিবার হা করে চেয়ে থাকে নতুন কাপড়, মিষ্টি বা উপহারের জন্য। এটি কেমন অভিশাপ? একটি মেয়ের পরিবারকে কবে পর্যন্ত এই বোঝা বইতে হবে?
আরও ভয়াবহ হলো, সন্তানসম্ভবা অবস্থায়ও অনেক নারী ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পায় না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন দায়িত্ব নিতে অপারগতা দেখায়, আবার সন্তান জন্মের সময় খরচ চালাতেও মেয়ের বাবা-মাকেই এগিয়ে আসতে হয়। মৌসুম এলেই ফল-মূল, কাপড়-চোপড় চাওয়া হয় মেয়ের বাবার কাছ থেকে। এটি শুধু অবিচার নয়, নিছক এক নির্লজ্জতার বহিঃপ্রকাশ।
এবার আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। এই পচন ধরা প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে হতে হবে প্রথম হাতিয়ার। সমাজের এই ক্যান্সার রুখে দেওয়ার জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বিয়েতে যৌতুক নেওয়া ও দেওয়া- দুটোই সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয় করে তুলতে হবে।
আমরা যদি সত্যিই একটি প্রগতিশীল সমাজ চাই, নারীর প্রতি সমানাধিকার ও সম্মান চাই, তবে এ ধরনের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। আজ যদি আমরা নিরব থাকি, কাল হয়তো আমাদের সন্তানরাই এই অন্যায়ের শিকার হবে। তরুণরা, এসো- জেগে উঠি, সচেতন হই, এবং সমাজ বদলাই। অপসংস্কৃতির ক্যান্সার থেকে সমাজকে মুক্ত করি।
লেখক, সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মী
শিব্বির আহমদ রানা