নীতি, ন্যায়ের কথা আমরা হরহামেশা শুনি। কেউ মুখে বলে, কেউ মঞ্চে গর্জে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সমাজে এমন এক শ্রেণির মানুষের আধিপত্য বেড়েছে, যারা কথার আড়ালে লুকিয়ে রাখে কর্মের কলুষ। কথায় নীতি, কাজে প্রতারণা—এ যেন এক অভিশপ্ত ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে!
মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদে যায়, সেজদায় লুটে পড়ে, যেন সে পরহেজগার! অথচ এই লোকটিই পরের হক মেরে খায়, নিজের অন্যায় ঢাকতে বলে—‘আল্লাহ তুমি রহমানুর রহীম!’ ধর্ম তার কাছে পুঁজি, বিবেক নয়।
হজ করে এলেন, নামের আগে ‘হাজ্বী’ যোগ করলেন, ছবি তুলে ফ্রেমে বাঁধালেন। এখন তিনি এলাকাবাসীর চোখে ‘হাজ্বী সাহেব’। অথচ অন্যের সম্পত্তি দখল করে মামলা-গণ্ডগোল বাঁধিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর পর বড়সড় মেজবান! প্রশ্ন জাগে—এই লোকটি আদতে কাকে সন্তুষ্ট করতে চেয়েছেন?
বিচারকের আসনে বসে পক্ষপাতদুষ্ট রায় দিয়েছেন। যুক্তি-প্রমাণকে বিকৃত করে অন্যায়কে ন্যায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিচার কেনাবেচার পণ্যে রূপ নিয়েছে। এমনকি নিরপরাধ মানুষকেও ধাঁধার ফাঁদে ফেলেছেন। কিন্তু মৃত্যুর পর চিরন্তন বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে!
বাহুবলে নিরীহ মানুষকে জুলুম করেছেন। ক্ষমতা, দলবল ও অর্থবলে সমাজে দাপট দেখিয়েছেন। কিন্তু একদিন মাটি সব গর্ব চুষে নেবে। ক্ষমতা আর মাস্তির মোহে যে অভিশপ্ত জীবনের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তা থেকে মুক্তি নেই।
‘আমি নেতা হতে আসিনি, সেবক হতে এসেছি’—এমন স্লোগান তুলে গরিব-দুঃখীর বন্ধু সেজেছেন। কিন্তু নির্বাচনোত্তর তিনি তাদেরই চাল, বস্তা, সেবা কেড়ে নিয়েছেন। মুখে নীতির বুলি আর বাস্তবে চরম দুর্নীতি—এই ভণ্ডামি লুকানো যায় না।
মঞ্চে উঠে মানবতার ফুলঝুড়ি, আদর্শের অজস্র কথন! কিন্তু বাস্তব জীবনে এক চরম প্রতারক। সমাজ তাকে দেখে ‘ভালো বক্তা’ হিসেবে, অথচ তার বুকে নেই মানবতা, মনে নেই নীতি।
এই সমাজে আজ সত্যিকারের নীতির চাইতে কথার ভেল্কি বেশি। কেউ কেউ কথার ঝলকে নিজেকে মহৎ সাজিয়ে তোলে, অথচ অন্তরে সঞ্চিত থাকে কুটিল ফাঁদ। সময় এসেছে—কথার মুখোশ ছিঁড়ে, কর্মের চেহারা দেখানোর। সমাজের বিবেকবানদের উচিত—এমন ‘নীতিবাক্যবাজ’ মুখোশধারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়া।
নীতির আসল প্রকাশ হোক কর্মে, মর্মে, জ্ঞানে ও ধ্যানে—নিচক অভিনয়ে নয়!
✍️ শিব্বির আহমদ রানা
লেখক, সাংবাদিক ও সমাজমনস্ক চিন্তক