বিশ্ব যখন নিস্তব্ধ, মুসলিম বিশ্ব যখন ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া ভেড়ার পাল—ঠিক তখনই সাহসিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় ইরান। ইরান শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, এটি একটি বিপ্লবের নাম, আত্মমর্যাদার প্রতীক। তাদের রয়েছে এক দূরদর্শী রণকৌশলী—খোমেনী।
যুদ্ধ শুরুর বহু আগেই তাকে ভয় পেতে শুরু করেছিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। খোমেনীকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল তাদের অন্যতম লক্ষ্য। একমাত্র খোমেনীই ছিল এমন এক নাম, যার উচ্চারণেই কেঁপে উঠত তেলআবিব, ইয়াহুদীবাদের মসনদ।
ইসরায়েলের চক্রান্তে শেষাবধি জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রও।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প—যিনি ছিলেন স্পষ্টতই ভারসাম্যহীন—চালিয়েছিলেন একতরফা হামলা ইরানের বিরুদ্ধে। তবে ইরান চুপ করে থাকেনি।সময়মতো দিয়েছে কড়া জবাব। প্রতিশোধ নিয়েছে সম্মানজনকভাবে, আত্মরক্ষার মধ্য দিয়ে।
সম্প্রতি, যুদ্ধের এক পর্যায়ে ইসরায়েলই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ইরানকে। বিশ্ব বুঝে গেছে—ইরানকে ভয় দেখিয়ে থামানো যায় না। এই যুদ্ধে অনেক মুসলিম নামধারী রাষ্ট্রের মুখোশও খুলে গেছে।
ইরান একাই লড়েছে—চরম দুঃসাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন রেখে।
তাদের লড়াই ছিল দ্বিমুখী—একদিকে গাজা-ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে সামনের লাইন, আরেকদিকে বৈশ্বিক চাপে রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। তবুও তারা পিছু হটেনি।ইতোমধ্যে ইরান ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে তেলআবিবের এক-তৃতীয়াংশ অবকাঠামো। অর্থনীতিকে ঠেলে দিয়েছে এক দশক পেছনে। এই প্রতিশোধে গাজা-ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত মুখেও এসেছে হাসি। বেদনার ভেতর থেকেও তারা গেয়ে ওঠে:
“তা’লা আল বাদরু আলাইনা
মিন ছানি’য়া তিল –ওয়া’দা
ওজাবাশ শুক’রু আলাইনা
মা দা আ লিল্লাহি দা
আইয়্যু হা’ল মাব উ’ছু ফিনা
জি’তা বি’ল-আম্রিল -মু’তা
জি’তা শার’রাফ তা’ল-মদিনা
মারহাবান ইয়া খাইরা দা”
মুহূর্তের জন্য হলেও যেন ভুলে যায় মৃত্যু ও ধ্বংসের ভয়াল স্মৃতি। এ যেন মরুভূমিতে হঠাৎ এক ফসলা শান্তির বৃষ্টি।
ইরান আজ আবার প্রমাণ করেছে—যারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে জানে, তাদের পরাজিত করা যায় না। তারা মরেও জিতে যায়। এটাই ইরান—আত্মমর্যাদার প্রতীক, রণশীল সাহসের প্রতিধ্বনি।
আজ মুসলিম বিশ্বকে আত্মজিজ্ঞাসা করতে হবে—আমরা কি শুধু দর্শক হয়ে থাকব? না কি সাহস নিয়ে বলব: আমরাও ইরান! নিজস্ব স্বত্বা ও গৌরব নিয়ে আবারও জেগে ওঠার সময় এখনই। ভেড়ার পাল নয়—একটি সিংহের গর্জন হোক আমাদের মুসলিম জাতী স্বত্বার পরিচয়। ইরানী শার্দূল জিন্দাবাদ! ইহুদীবাদের পতন হোক, মানবতার মুক্তি আসুক।
লেখক-
শিব্বির আহমদ রানা
সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মী।