মো. মাহফুজুর রহমান::
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকারি আলাওল কলেজে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এইচএসসি ২০২৫ ব্যাচের বিদায়ী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কিছু আপত্তিকর নৃত্য পরিবেশনা এবং টিকটক-ধর্মী প্রদর্শন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা অশালীন ও বেহায়াপনা ঘেঁষা পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন, যা সামাজিক রীতিনীতির পরিপন্থী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অধ্যক্ষের দায়িত্বহীনতা প্রশ্নবিদ্ধ, নতুন যোগ দেওয়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়েই সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবক, শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষানুরাগীরা। অনুষ্ঠানটি কলেজ চত্বরে আয়োজন করা হলেও কর্তৃপক্ষ এই অপসংস্কৃতি ও ‘টিকটক-ভিত্তিক’ পরিবেশনার বিষয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়নি বা কোনো কার্যকর নজরদারির উদ্যোগ নেয়নি।
একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“এইচএসসি শিক্ষার্থীদের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদায় অনুষ্ঠান কোন নীতিমালা বা দিকনির্দেশনা ছাড়াই আয়োজন করার দায় অধ্যক্ষ এড়াতে পারেন না। তাঁর দায়িত্ব ছিল এ অনুষ্ঠানকে শৃঙ্খলিত ও আদর্শিক বানানো।”
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, মূল্যবোধের পতন, এই ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে শুধু শিক্ষার্থী নয় পরিচালনা, নির্দেশনা এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনও সচেতনতার অভাবে ভুগছে। বিদায় অনুষ্ঠান একটি শিক্ষামূলক ও স্মৃতিময় আয়োজন হওয়া উচিত। কিন্তু তা যদি হয়ে ওঠে ‘ট্রেন্ড’ তোলার প্রতিযোগিতা, তবে এর দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সমাজকেও নিতে হবে।
সমাজের বৃহত্তর দায়বদ্ধতা, সামাজিক অবক্ষয়ের এই ধারা থামাতে হলে দায় শুধু অধ্যক্ষের নয় অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, এবং নীতিনির্ধারকদেরও নিতে হবে।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “আমরা শুধু ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে ক্ষোভ ঝাড়ছি, কিন্তু ঘরে বসে সন্তান কী শিখছে, কী দেখছে সেটা দেখার সময় নেই অভিভাবকদের।”
সরকারি আলাওল কলেজের এই অপসংস্কৃতিমূলক ঘটনার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই, বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির। একজন শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কেবল বিদায় জানানো নয়, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার শেষ পাঠ দেওয়ার। আমরা চাই, এই ঘটনা তদন্তসাপেক্ষে শিক্ষণীয় হয়ে উঠুক—কেবল একটি কলেজের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য।