বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন আজ আর কেবল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নয়—এগুলো ক্রমেই পরিণত হচ্ছে নৈরাজ্যের দুর্গে। যেখানে মেধা ও মননের বিকাশ হওয়ার কথা, সেখানে দাপট দেখাচ্ছে দখল, সহিংসতা ও রক্তাক্ত রাজনীতি। বিশেষ করে ছাত্রাবাসগুলোতে যে “হল রাজনীতি” চলছে, তা শিক্ষাব্যবস্থাকে গভীর সংকটে ফেলেছে।
একসময় ক্যাম্পাস রাজনীতি ছিল আদর্শ ও নেতৃত্ব গঠনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এখন তা কলুষিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে। হলে সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে মেধা নয়, বরং রাজনৈতিক পরিচয়ই হয়ে উঠেছে প্রধান যোগ্যতা। এর ফলে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে, মনোবল হারাচ্ছে, অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
রাজনীতির নামে চালু হয়েছে ‘র্যাগিং’। যেখানে বড় ভাইয়ের স্নেহের বদলে আছে ভীতি, নির্যাতন আর মানসিক চাপ। এর ভয়াবহতা এতটাই যে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা হতাশা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা কিংবা আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শুরু হয় নারী ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা, এমনকি সশস্ত্র দখলদারিত্ব।
একই ক্লাসের সহপাঠীরা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে শত্রুতে পরিণত হয়। বন্ধুত্ব ভেঙে যায়, ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অভিভাবকরা শঙ্কিত—তাদের সন্তান পড়াশোনা করবে, নাকি রাজনীতির শিকার হয়ে ক্ষতবিক্ষত হবে?
তাহলে প্রশ্ন জাগে—
👉 কত লাশ হলে থামবে এই নোংরা রাজনীতি?
👉 আর কত মেধা ধ্বংস হলে প্রশাসন জাগবে?
আমরা চাই জ্ঞানভিত্তিক, নৈতিক রাজনীতি। চাই নেতৃত্বের বিকাশ—আদর্শের মাধ্যমে, অস্ত্র কিংবা আধিপত্যের মাধ্যমে নয়। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক মুক্ত চিন্তার চর্চাগার। না যে, কোনো দলে যুক্ত না হলে হোস্টেল সিট পাওয়া যাবে না কিংবা ‘বড় ভাইয়ের’ রাজনীতির ছায়া ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব হবে।
শিক্ষাঙ্গন হোক শান্তির স্থান। প্রতিযোগিতা হোক মেধায়, নেতৃত্ব গড়ে উঠুক সততায়।
✍️ আজমাইন ইকতিকার শাফি
শিক্ষার্থী, বাকলিয়া সরকারি কলেজ