
শিব্বির আহমদ রানা: শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তপ্ত রোদের মধ্যে কর্দমাক্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড় করিয়ে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে বিরল সম্মাননা দেওয়া হয়েছে পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় এণ্ড কলেজের নবনিযুক্ত এডহক কমিটির সভাপতি মো. মোরশেদুল আলমকে। বৃহস্পতিবার সকালে মোশাররফ আলী বাজার থেকে বিদ্যালয়ে পৌঁছালে প্রধান শিক্ষক তৌহিদুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাকে স্বাগত জানান।
এ সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়ানো শত শত ছাত্র-ছাত্রীকে দিয়ে সভাপতিকে বরণ করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সচেতন মহল এটিকে শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরণ এবং শিক্ষা ও মানবাধিকারের পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় এণ্ড কলেজ এর প্রধান শিক্ষক তৌহিদুর রহমান কে ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নি।
সচেতন মহলের বক্তব্যে উঠে আসে-বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই প্রদর্শনীর উপকরণ নয়। শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো বা কষ্ট দেওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শামিল। এছাড়া জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (CRC) প্রতিটি শিশুর নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠা ও শিক্ষার নিশ্চয়তা দেয়।
তবে নবনিযুক্ত সভাপতি মো. মোরশেদুল আলম এক মতবিনিময় সভায় বলেন, “আমার বাবা মরহুম আবুল ইসহাক চৌধুরী এ প্রতিষ্ঠানে ২৮ বছর দায়িত্বে ছিলেন। তারই উত্তরসূরী হিসেবে আমি দায়িত্ব নিতে এসেছি। বিদ্যালয়ের উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য। আমি নিতে আসিনি, দিতে এসেছি। এজন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা কামনা করছি।”
সভায় প্রধান শিক্ষক তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে শিক্ষক প্রতিনিধি মাশুক এলাহী চৌধুরী, অভিভাবক সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মোক্তার আহমেদ, জামশেদুল ইসলাম চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অনুষ্ঠানের দিনই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুর রহমানের ওপর গুনাগরি এলাকায় সিএনজি অটোরিকশায় উঠার সময় হামলার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা ও শিশু অধিকার কর্মীরা বলছেন-অতিথি বরণে শিক্ষার্থীদের কষ্ট না দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা বা সংক্ষিপ্ত আয়োজন করা উচিত।শিক্ষার্থীদের বাধ্য করলে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা জোরদার করতে হবে।
সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন-“একজন সভাপতি বা অতিথিকে বরণ করার জন্য কেন শত শত শিক্ষার্থীকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হবে? এটি কেবল শিশুদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং বিদ্যালয়ের সুস্থ পরিবেশকেও নষ্ট করছে।”