বায়ুকে ভর করে আকাশে ভেসে চলা যান্ত্রিক এক বিস্ময়ের নাম “বিমান”। মানুষের যাতায়াতকে দ্রুত, আরামদায়ক ও নিরাপদ করে তুলতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বৈমানিকের দক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত এ যন্ত্র আধুনিক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে সামরিক, বাণিজ্যিক, গবেষণা, উদ্ধার তৎপরতা, চিত্রধারণ, মহাকাশ অনুশীলন এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাণেও।
পাইলট প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার দিক থেকেও বিমান পরিচালনা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর কাজ। লাইসেন্সপ্রাপ্ত PPL বা CPL পাইলটের পাশাপাশি কো-পাইলট, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সংশ্লিষ্ট সকলেই একত্রে বিমান চালনায় অংশ নিয়ে থাকেন। বিমান চলাচলের বিভিন্ন ধাপ—যেমন ট্যাক্সি, টেক-অফ, ক্লাইম্ব, ক্রুজ, ডিসেন্ট, ল্যান্ডিং—এসব সবই ঘটে সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনার মাধ্যমে। এ নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র হলো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (ATC), যা প্রতিটি বিমানের চলাচল নজরে রাখে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়।
তবে এত উন্নত প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মানবসম্পদের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বিমান দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না সবসময়। সাম্প্রতিক এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার মতো কিছু মর্মান্তিক ঘটনা আবারও এ বাস্তবতাকে সামনে এনে দিয়েছে। অনেক সময় একটি দুর্ঘটনায় বিমানের সব যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে-যা যাত্রীদের মধ্যে গভীর উৎকণ্ঠা, ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।
বিমান দুর্ঘটনার পেছনে মূলত কিছু নির্দিষ্ট কারণ কাজ করে-যেমন যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল সিদ্ধান্ত, খারাপ আবহাওয়া, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের গাফিলতি, রানওয়ের সমস্যা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত নাশকতা, রক্ষণাবেক্ষণের অবহেলা কিংবা পাইলটের শারীরিক-মানসিক অক্ষমতা। এসব যে কোনো একটি কারণ পুরো বিমানের নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করে দিতে পারে।
এই অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ। প্রথমত, বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাইলট ও ক্রুদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা যাচাই, ATC ব্যবস্থার উন্নয়ন, উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা, ব্ল্যাকবক্স ও ফ্লাইট ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ত্রুটি চিহ্নিতকরণ—এসব পদক্ষেপ নিতে হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে। একইসাথে নিরাপত্তা নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ও যাত্রীদের সচেতনতাও বাড়াতে হবে।
প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার মাধ্যমে আমরা চাইলে বিমান দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারি। তাহলেই একদিন হয়তো “নিশ্চিত গন্তব্য” হয়ে উঠবে সত্যিকার অর্থে “নির্ভরযোগ্য”।
✍️ তৌহিদ-উল বারী
তরুণ লেখক ও কলামিস্ট