আলাওল কলেজে ছাত্রীর নৃত্যপ্রদর্শন যেন নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিফলনবাঁশখালী সরকারি আলাওল কলেজ। এটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতীয়করণ হয় ২০১৮ সালে। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পৌরসভা সদরে অবস্থিত এ কলেজটিকে নিয়ে যেন বিতর্কের শেষ নেই। কিছু দিন পর পর উঠে কলেজটিকে নিয়ে নানা বিতর্কের গুণ্জন। এসবে থাকে কলেজ কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের অবৈধ মেলামেশা, সামাজিক সাইটে টিকটক ভিডিও ভাইরাল সহ নানা অভিযোগ।
সম্প্রতি কলেজে বিদায় অনুষ্ঠানের নামে ছেলেমেয়ের নৃত্য প্রদর্শন এ সমালোচনার ঝড়কে আরো তীব্র করেছে। এ নিয়ে চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা, বিরুপ মন্তব্য আর শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার তীব্র আক্ষেপ। প্রশ্নটা থেকে যায়, বিদায় অনুষ্ঠানের নামে নৃত্য প্রদর্শন, রেগ ডে’র নামে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার আর ডিজে গানের সুরে শিক্ষার্থীদের অঙ্গভঙ্গির প্রদর্শন কিসের ইঙ্গিত দেয়? কারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব বাস্তবায়নে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কিম্বা এসবে বাধা দিতে কেন কেউ আসছে না, কি বলে সচেতন মহল?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবে, বিনোদন হিসাবে বিভিন্ন খেলাধুলা করবে। জ্ঞান চর্চার জন্য বিভিন্ন উদ্বোধনী প্রকল্প; যেমন: বিজ্ঞান প্রজেক্ট তৈরি, দেশের জাতীয় স্বার্থে পচনশীল বর্জ্য থেকে সম্ভাবনী পণ্য তৈরি, গ্যাস তৈরি থেকে শুরু করে নানা পজিটিভ বিষয় শিক্ষার্থীরা তুলে ধরবে। এটাই একজন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব। কিন্তু বিনোদনের নামে বিদায় অনুষ্ঠানে গানবাজনা, নৃত্য প্রদর্শন এসব কখনো কাম্য নয়।
আমরা দেখেছি উক্ত কলেজটিতে যেদিন বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় সেদিন খুব সম্ভবত ছুটির দিন ছিলো। কলেজ শিক্ষকদের উপস্থিতিও নেই বললে চলে, কিন্তু একটা বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিত থেকে দোয়া মাহফিল আয়োজন করে বিদায় দিতে হয় কিংবা শিক্ষার্থীদের বিদায় নিতে হয়। কেন সেদিন শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলো না কিম্বা শিক্ষকরা আদৌও এ বিদায়ের পক্ষে ছিলো কিনা? তাদের দিক-নির্দেশনায় এ বিদায় আয়োজন হয়েছে কিনা? নাকি নির্দিষ্ট কেউ তাদের ইচ্ছেমাফিক এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলো। আয়োজনে উপস্থিত থেকে কেন তারা এমন কর্মকান্ডে জড়ালো, যা পরে সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি করেছে। বিদায় অনুষ্ঠানে বিদায় দিতে যাওয়া মঞ্চে উপস্থিত ব্যক্তিগণ কারা ছিলো, যেন নানা প্রশ্ন সচেতন মহলের।
কেন শিক্ষার্থীরা এসবে জড়াচ্ছেন? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হয়তো, সবার জানার বিষয়। এসবে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের মনিটরিং ঘাটতি, অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নে দৃষ্টিপাত না রাখা, নির্দিষ্ট শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থী কোচিং-প্রাইভেট না পড়া, প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির প্রভাব পড়া, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নামে কিশোরগ্যাংদের দৌরাত্ম। এ সমস্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে পারছি না। তাই আমাদের শিক্ষক সমাজের উচিত তাদের শিক্ষার্থীদের একাডেমিকস এর পড়াশোনার বাইরে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা জড়াবে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।
লিখেছেনঃ তৌহিদ-উল বারী
শিক্ষার্থী ও তরুণ লেখক।