ভলিউড, ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম, যেখানে চলচ্চিত্র শুধু বিনোদনের উৎস নয়, বরং সামাজিক বার্তা ও মূল্যবোধ নির্মাণের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বহু ভলিউড চলচ্চিত্রে মুসলমানদের উপস্থাপন যে ধারায় এগোচ্ছে, তা গভীরভাবে চিন্তার বিষয়। অনেক সিনেমায় মুসলিম চরিত্রগুলোকে একপাক্ষিকভাবে জঙ্গি, চরমপন্থী, বা রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এই চিত্রায়ন কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ায় না, বরং সমাজে এক ধরনের অদৃশ্য দেয়াল তুলে দেয় যা ভাঙা অত্যন্ত কঠিন।
একটি শিশু যখন প্রথম সিনেমা দেখতে শুরু করে, তখন তার মানসিক গঠনে দৃশ্যমান চরিত্রগুলোর গভীর প্রভাব পড়ে। যদি সে বারবার দেখে যে একজন মুসলমানকে বোমা হাতে, চেহারায় খোঁচা দাড়ি, টুপি ও রুঢ় ব্যবহার নিয়ে দেখানো হচ্ছে, তবে তার মনে স্বাভাবিকভাবেই একটি নেতিবাচক ধারণা গেঁথে যায়। সময়ের সাথে সেই বাচ্চাটি বড় হয়ে ওঠে একজন পক্ষপাতদুষ্ট নাগরিক হিসেবে। এভাবেই মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজে বিভাজনের বীজ বপিত হয় অবচেতনে, ধীরে ধীরে।
এই পরিস্থিতি মুসলিম সমাজের জন্যও মানসিকভাবে খুবই চ্যালেঞ্জিং। একজন সাধারণ মুসলমান যখন নিজেকে সিনেমার পর্দায় বারবার খলনায়ক হিসেবে দেখে, তখন তার আত্মপরিচয় নিয়ে সংকট তৈরি হয়। সে বুঝতে পারে না কেন তার ধর্মীয় পরিচয়কে সবসময় নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অনেক সময় তরুণরা এই অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে, যা কখনো কখনো প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবকেও উস্কে দিতে পারে।
অন্যদিকে, এই ধারা যদি দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে, তবে তা শুধুই একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াবে না, বরং ভারতের মত বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের মেলবন্ধন নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসে ডুবে যাবে, যা সমাজে চরম অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। বর্তমানে যা পরিলক্ষিত হচ্ছে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে জঙি নাম দিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে মুসলমানদের, যার একটু হলেও দায় এই ভলিউডের উপর ও পড়ে। বাংলাদেশে ভলিউড জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তা হ্রাস করতে হবে যাতে একজন মুসলিম শিশুর মনোভাবকে যেনো ভলিউড প্রভাবিত না করতে পারে। কাজেই আমাকে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ম মানুষকে শান্তি শেখায়, ধর্মীয় পরিচয় ছাড়া অন্য বড় কোনো পরিচয় মানুষ বহন করেনা,। কাজেই নিজের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে,। অন্যান্য ধর্মকে ও সম্মান করতে হবে,। মানুষ শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নয়, এই শৃঙ্খলা ধর্মই আমাদের শেখায়।
ভলিউডের উচিত বাস্তবতাকে আলোর মুখে আনা, ইতিহাসের বহুমাত্রিকতাকে সামনে রাখা এবং ধর্মীয় পরিচয়ের ওপরে মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ সিনেমা কেবল কাহিনির বিনিময় নয় এটি চিন্তা ও চেতনার বিস্তার। যদি এই চেতনা ঘৃণায় রূপ নেয়, তবে তার প্রভাব শুধুই বিনোদনের সীমায় থাকবে না, তা সমাজের গভীরে ঢুকে পড়বে এবং এক ভয়ংকর ভবিষ্যতের ভিত্তি রচনা করবে।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
শিক্ষার্থী- মাস্টার নজির আহমদ কলেজ।