নিজস্ব প্রতিবেদক:: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন কেন্দ্র বাঁশখালী ইকোপার্ক আবারও ফিরে পাচ্ছে নতুন স্বপ্ন। দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা উন্নয়ন কার্যক্রমকে নতুন গতিতে এগিয়ে নিতে বন বিভাগ তৈরি করেছে বিস্তৃত ও সমন্বিত একটি মাস্টারপ্ল্যান, যা বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ইকোপার্কটির সার্বিক চিত্রে বড় পরিবর্তন আসবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, '২০২৫ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ইকোপার্কের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা এই মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পার্কের আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আধুনিক পর্যটন সুবিধা যুক্ত হবে।' তিনি জানান, বাঁশখালী ইকোপার্ক এবং জলদী অভয়ারণ্য- উভয়ই দেশের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল, বিশেষ করে হাতির প্রধান বিচরণ ও প্রজনন এলাকা হওয়ায় পরিবেশগত গুরুত্বও অত্যন্ত বেশি।
ইকোপার্কে উন্নয়নের অন্যতম প্রয়োজনীয় দিক- প্রবেশ পথ ও সংযোগ অবকাঠামো—এখনো বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে। পুরোনো কাঠের সেতু ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বন বিভাগ জানায়, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ও পর্যটন সুবিধার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।
বাঁশখালী জলদী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, 'ইকোপার্কের বিশাল প্রাকৃতিক এলাকা পর্যটনের জন্য অসামান্য সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মাস্টারপ্ল্যান এগিয়ে গেলে সরকার যেমন বাড়তি রাজস্ব পাবে, তেমনি পার্কও ফিরে পাবে তার হারানো জৌলুস ও আধুনিকতা।'
ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হক জানান, ইকোপার্কের পরিবেশ, উদ্ভিদ, প্রাণী, জলজ বাস্তুতন্ত্র–সবকিছু বিবেচনায় রেখে বিশেষজ্ঞ দল মাস্টারপ্ল্যানটি প্রস্তুত করেছে। 'বাস্তবায়ন হলে বাঁশখালী ইকোপার্ক আন্তর্জাতিকমানের পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে,' বলেন তিনি।
১৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি প্রাকৃতিক বনভূমি, পাখি ও বন্যপ্রাণীর বিচরণ, সবুজ ছায়াময় পথ এবং দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু- সব মিলিয়ে ইকোপার্ক বহু বছর ধরেই ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে একটি প্রিয় গন্তব্য। শীতের মৌসুমে অতিথি পাখির উপস্থিতি এখানে যুক্ত করে বাড়তি মাত্রা।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ১২০০ হেক্টর আয়তনের এই ইকোপার্কে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, পর্যবেক্ষক টাওয়ার, লেক, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, পাহাড়ি রাস্তা এবং বিস্তীর্ণ বনভূমি। তবে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোর অবনতি পর্যটকদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সম্প্রতি সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে, তবুও প্রয়োজন সামগ্রিক ও আধুনিক উন্নয়ন।
১৯৯৩ সালে সেচের সুবিধার জন্য তৈরি করা হয় বামেরছড়া ও ডানেরছড়া বাঁধ, যা ২০০৮ সালে ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যায়। এর ক্ষত এখনো রয়ে গেছে অযত্নে, যা পার্কের দুরবস্থাকে আরও বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নতুন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে পার্কটি আবারও ফিরে পাবে তার ভরা যৌবন, আর বাঁশখালী হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ইকো-ট্যুরিজম স্পট। উন্নয়ন-প্রত্যাশীদের আশা- মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদিত হলেই বদলে যাবে বাঁশখালী ইকোপার্কের ভবিষ্যৎ।
প্রকাশক ও সম্পাদক : শিব্বির আহমদ রানা, ফোন নম্বর: ০১৮১৩৯২২৪২৮, 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐛𝐚𝐧𝐬𝐡𝐤𝐡𝐚𝐥𝐢𝐬𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐩@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
অস্থায়ী ঠিকানা: স্মরণিকা প্রিন্টিং প্রেস। উপজেলা সদর, জলদী, বাঁশখালী, পৌরসভা, চট্টগ্রাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত