শিব্বির আহমদ রানা:: চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে ‘সংগঠক’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ যদি কারও জীবনে খুঁজতে হয়, তাহলে নাম আসবে মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম হোসাইনীর।আন্দোলনমুখী ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে বাঁশখালীর প্রথম মেয়র- এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে তাঁকে লড়তে হয়েছে শুধু প্রতিপক্ষের সাথেই নয়, রাজনৈতিক প্রতিকূলতা, দুঃসময় ও ত্যাগের সাথেও। প্রায় চার দশকের এই পথচলায় বারবার প্রমাণ করেছেন- নেতৃত্ব মানে শুধু পদ নয়, জনগণের আস্থা আর ভালোবাসা।
শিক্ষা, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার পরিবেশে বেড়ে ওঠা কামরুল ইসলাম হোসাইনীর জন্ম ১৯৭০ সালের ১ মার্চ। তাঁর পিতা হাফেজ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন জলদী হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার সম্মানিত অধ্যক্ষ। এ শিক্ষামূলক উত্তরাধিকারই পরবর্তীতে তাঁর নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির ভিত তৈরি করে। ছাত্রজীবনে সৎ, স্পষ্টভাষী ও সাহসী চরিত্রের জন্য দ্রুত পরিচিত হন তিনি। পাশাপাশি তিনি একজন সু-বক্তাও।
তার শুরুটা ছিল ছাত্ররাজনীতিতে। ১৯৮৩ সালে রাজনীতির মাঠে তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক পদচারণা। হাঁটতে শুরু করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পতাকা হাতে। এরপর এক যুগ ধরে বাঁশখালী এবং পুরো দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে ভূমিকা পালন করেন সম্মুখসারিতে দাঁড়িয়ে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, রাস্তায় নামা, গ্রেফতার এড়ানো, মাঠের নেতৃত্ব- সবকিছুর মধ্য দিয়েই তিনি তৈরি হন একজন পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে।
সংকটের সময় সামনে এসে দাঁড়ানো এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তিনি। ৮০’র দশকের শেষ দিকে বিএনপি যখন দক্ষিণ চট্টগ্রামে সাংগঠনিক শূন্যতায় পড়ে, ঠিক তখনই তিনি সামনে এগিয়ে আসেন। নেতাহীন সময়ের দিশেহারা কর্মীদের সংগঠিত করার কাজ হাতে নেন; ইউনিয়ন, ওয়ার্ড- গ্রামের পর গ্রাম ছুটে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে পুনর্গঠিত করেন। এ কারণে তৃণমূলে তাঁকে আজও অনেকে বলেন- 'বাঁশখালী বিএনপি পুনর্গঠনের অন্যতম কারিগর।'
প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও জনপ্রতিনিধিত্বে তিনি অনন্য ব্যক্তিত্ব। ২০০১ সালের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পর পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৩ সালে বাঁশখালী পৌরসভা গঠিত হলে সরকার তাঁকেই মনোনীত করে প্রথম প্রশাসক হিসেবে। এরপর ২০০৪ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে হন প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান- পরবর্তীতে মেয়র পদবীতে অভিষেক। মেয়াদকালে পৌর অবকাঠামো, শিক্ষা ও জনসেবামূলক খাত উন্নয়নে উদ্যোগী ভূমিকা রেখে মানুষের আস্থা অর্জন করেন তিনি।
আন্দোলন-সংগ্রামেও তিনি ছিলেন একজন নীরেট রাজনৈতিক। মাঠের রাজনীতি করতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ একাধিক মামলা হয়। তবুও রাজনীতি ছাড়েননি; লড়াই চালিয়ে গেছেন জনগণের পাশে থেকে। রাজনীতিতে ত্যাগের পরিচয় বহন করেই এখনো তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সামাজিক ও মানবিক কাজেও তিনি ছিলেন দেদীপ্যমান। প্রলয়ঙ্করী ১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পুনর্গঠনে তিনি ছিলেন বাঁশখালীর অন্যতম সমন্বয়ক। ত্রাণ বিতরণ, পুনর্বাসন, চিকিৎসাসেবা- সবখানেই ছিল তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি। এ ছাড়া খেলাধুলা, শিক্ষা, চিকিৎসা শিবির, খতনা ক্যাম্পসহ নীরবে-নিভৃতে বহু সামাজিক উদ্যোগ পরিচালনা করেন দীর্ঘ সময় ধরে।
শিক্ষা উন্নয়নেও তাঁর সমান সম্পৃক্ততা রয়েছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে দায়িত্ব পালন, ট্যাগ সদস্য ও সভাপতির দায়িত্ব- সব মিলিয়ে স্থানীয় শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছেন। সমাজের গঠনমূলক উন্নয়নে শিক্ষা ও তরুণ প্রজন্মকে সবসময় এগিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি।
কামরুল ইসলাম হোসাইনীর রাজনৈতিক যাত্রা দেখায়-
জনপ্রতিনিধি শুধু নির্বাচিত কেউ নয়, বরং মানুষের আস্থার জায়গা। সংগঠক হিসেবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়- সংকটে পাশে থাকা নেতা, ক্ষমতায় থাকলেও কিংবা না থাকলেও মানুষকে ছাড়েননি। মানুষও তাঁকে ছাড়েন নি সময়-অসময়ে।
রাজনীতির মাটিতে শিকড় গেড়ে থাকা এই বর্ষিয়ান নেতার কাছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের এখনো প্রত্যাশা-
তিনি আবারও বাঁশখালীর রাজনীতিকে দিকনির্দেশনা ও সাহস যোগাবেন। তাঁর রাজনৈতিক ধারা- আন্দোলন, আদর্শ ও জনগণের সাথে অটুট যোগাযোগ- এখনো দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একটি আলাদা পরিচয় বহন করে।
প্রকাশক ও সম্পাদক : শিব্বির আহমদ রানা, ফোন নম্বর: ০১৮১৩৯২২৪২৮, 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐛𝐚𝐧𝐬𝐡𝐤𝐡𝐚𝐥𝐢𝐬𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐩@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
অস্থায়ী ঠিকানা: স্মরণিকা প্রিন্টিং প্রেস। উপজেলা সদর, জলদী, বাঁশখালী, পৌরসভা, চট্টগ্রাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত