মানবজীবনের প্রতিটি ধাপে ইসলামী শরীয়াহ্ আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক। একজন মুসলমান জন্মের মুহূর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে জীবনযাত্রা অনুসরণ করে, তা মূলত শরীয়াহ্-নির্দেশিত। শিশুর জন্মের পরপরই তার ডান কানে আজান ও বাঁ কানে ইকামত দেওয়া হয়, যেন প্রথমেই সে আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার শিক্ষা পায়। শৈশবে সুন্নাহ্ মোতাবেক খৎনা করা হয়, আকীকার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়, সুন্দর নাম রাখা হয়। যৌবনে বিবাহ-বন্ধনও সম্পন্ন হয় শরীয়াহ্ বিধান অনুযায়ী—মোহর নির্ধারণ, সাক্ষীর উপস্থিতি, ওয়ালির সম্মতি—সবকিছুই ইসলামী নির্দেশনা মেনেই হয়।
তারপর আজীবন ইবাদতের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রমজানের রোযা, যাকাতের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন, হজ্বের মাধ্যমে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব—এসবই তো শরীয়াহ্-নির্দেশিত জীবনব্যবস্থার অংশ। মৃত্যুর পরও শরীয়াহ্ আমাদের ছেড়ে যায় না; জানাযা, কাফন-দাফন, মাগফিরাতের দোয়া—সবই ইসলামী বিধান মেনে হয়। অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে একজন মুসলমান শরীয়াহ্ মানে, মানছেই।
তাহলে প্রশ্ন জাগে- যেখানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়াহ্ আইন মেনে চলা হয়, সেখানে রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে কেন নয়? রাজনীতি আসলে ক্ষমতার খেলা নয়; রাজনীতি হলো মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করার মাধ্যম, রাষ্ট্রকে ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে গড়ে তোলার দায়িত্ব। ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতের ধর্ম নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম 'ইসলাম'। সেখানে যেমন নামায-রোযার বিধান আছে, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনা, অর্থনীতি, শিক্ষা, কর-ব্যবস্থা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সম্পর্কেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
ইসলামী শরীয়াহ্ রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে ন্যায়বিচার কার্যকর হবে। ধনী কিংবা গরিব, ক্ষমতাধর কিংবা দুর্বল—সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত হবে। দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার দমন করা সম্ভব হবে। অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে, মানুষ নিরাপদ জীবনযাপন করবে। যাকাত ও সদকার মাধ্যমে ধনীদের সম্পদ গরিবদের মাঝে বণ্টিত হবে, অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মুসলিম উম্মাহ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হবে।
কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়াহ্ মেনে চললেও রাজনীতিকে শরীয়াহ্ থেকে আলাদা করে রেখেছি। অনেকে মনে করে রাজনীতি মানেই প্রতারণা, কৌশল আর ক্ষমতার দখলদারিত্ব। অথচ ইসলামী দৃষ্টিতে রাজনীতি কোনো স্বার্থের খেলা নয়, বরং এটি এক মহৎ দায়িত্ব, একটি আমানত, এমনকি এক ধরণের ইবাদত। পশ্চিমা ধাঁচের আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অনুসরণ করতে করতে আমরা ভুলে গেছি, ইসলামই আমাদের জন্য পূর্ণ সমাধান দিয়েছে।
অতএব, প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট-শরীয়াহ্ আইন শুধুমাত্র নামায, রোযা বা ব্যক্তিগত ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়। শরীয়াহ্ হলো সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা। আমরা জন্মের পর আজান দেই, খৎনা করি, বিয়ে-শাদি করি, জানাযা পড়ি-সবই শরীয়াহ্ মেনে। তবে কেন রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতিতে শরীয়াহ্ মানতে আপত্তি থাকবে? যারা রাজনীতি কে ইসলাম ও শরীয়াহ্ থেকে আলাদা করতে চায়, তারা রাজনীতিকে ধোকাবাজির দৃষ্টিতে বিবেচনা করে। রাজনীতি থেকে শরীয়াহ্ বাদ দিলে জীবনব্যবস্থার একটি বড় অংশ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
একটি মুসলিম জাতির পূর্ণতা কেবল তখনই আসবে, যখন শরীয়াহ্ শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতেও সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এটাই হবে সত্যিকারের কল্যাণময় সমাজ ও ইসলামী পূর্ণতার প্রতীক।
লেখক-
শিব্বির আহমদ রানা
সমাজ ও সংবাদকর্মী
প্রকাশক ও সম্পাদক : শিব্বির আহমদ রানা, ফোন নম্বর: ০১৮১৩৯২২৪২৮, 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐛𝐚𝐧𝐬𝐡𝐤𝐡𝐚𝐥𝐢𝐬𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐩@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
অস্থায়ী ঠিকানা: স্মরণিকা প্রিন্টিং প্রেস। উপজেলা সদর, জলদী, বাঁশখালী, পৌরসভা, চট্টগ্রাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত