বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ কিংবা শহর-সবখানেই মসজিদ ও মাদরাসা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। এগুলো শুধুই ইবাদতের স্থান নয়, বরং মানবিকতা, একতা ও সম্প্রীতিরও কেন্দ্র। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক এলাকায় দেখা যায়, এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট পরিবারের দখলে চলে যাচ্ছে। এমনকি পূর্বপুরুষদের দেওয়া দানের জায়গা নিয়েও চলে আত্মীয়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ওয়াকফ্ অস্বীকার করে নিজেদের নামে নামজারি করার দুঃসাহস পর্যন্ত করা হয়। যা শুধু অনৈসলামিকই নয়, সামাজিক অবক্ষয়েরও লক্ষণ।
ওয়াকফ সম্পত্তির সাথে প্রতারণা ইসলামী শরীয়তে গুনাহে কাবিরা হিসেবে জানি। ইসলামে ওয়াকফ্ সম্পত্তিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক মনে করা হয়। কারও পূর্বপুরুষ যদি আল্লাহর রাস্তায় জমি বা সম্পত্তি দান করে থাকেন-তা চিরকাল সেই উদ্দেশ্যেই ব্যবহারযোগ্য। উত্তরসূরীরা সেটা নিজেদের নামে দলিল করে নিলে তা হবে সরাসরি অন্যায়ের শামিল। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যের হক আত্মসাৎ করবে, সে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে।” (সহিহ মুসলিম)
সুতরাং, পূর্বপুরুষের ওয়াকফ্ সম্পত্তি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়া বা ব্যবহার করা শুধু সামাজিক নয়, মারাত্মক ধর্মীয় অপরাধও বটে। পারিবারিক একচত্রতা ভেঙে দরকার সার্বজনীন অংশগ্রহণ।
আরেকটি বড় সংকট হলো, মসজিদ-মাদরাসা পরিচালনায় সবার অংশগ্রহণ নেই। একটি বা দুটি পরিবার বছরের পর বছর ধরে পরিচালনা কমিটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে সাধারণ মানুষের মতামতের কোনো গুরুত্ব থাকে না। অথচ মসজিদ ও মাদরাসা তো পুরো এলাকার জন্য, তাই এর নেতৃত্ব ও পরিচালনায়ও সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
যেখানে মতামতের ভিত্তিতে ভোট দিয়ে স্বচ্ছভাবে কমিটি গঠিত হবে, সেখানে গঠনমূলক পরামর্শ আসবে, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে, আর অপারদর্শিতা কিংবা অনিয়ম কমে আসবে। ইমাম-মোয়াজ্জিমের বেতন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সব কাজেই তখন হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
মসজিদ হোক পবিত্র ও ঝামেলাহীন জায়গায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিতর্কিত বা বিরোধপূর্ণ জায়গায় যেন কখনো মসজিদ নির্মাণ না হয়। কারণ যেখানে দ্বন্দ্ব, হিংসা কিংবা হক বিরোধ আছে, সেখানে শান্তি ও ইবাদতের পরিবেশ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। মসজিদ হোক নিরবিবাদ, পবিত্র, স্বচ্ছ জমিতে-যা মুসল্লিদের আত্মিক প্রশান্তি দেবে।
শেষ কথা: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হোক সম্প্রীতির বন্ধনের জায়গা। মসজিদ-মাদরাসা যদি বিভাজনের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা ইসলাম ও সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব প্রতিষ্ঠানকে পারিবারিক দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে সার্বজনীনতার পথে নিয়ে আসাই এখন সময়ের দাবি। একমাত্র স্বচ্ছতা, মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব, এবং পূর্বপুরুষদের ওয়াকফ আমানতের প্রতি সম্মান জানিয়েই গড়া যাবে একটি শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সমাজ।
🖊️লেখক-
শি ব্বি র আ হ ম দ রা না
(গণমাধ্যমকর্মী)
প্রকাশক ও সম্পাদক : শিব্বির আহমদ রানা, ফোন নম্বর: ০১৮১৩৯২২৪২৮, 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐛𝐚𝐧𝐬𝐡𝐤𝐡𝐚𝐥𝐢𝐬𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐩@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
অস্থায়ী ঠিকানা: স্মরণিকা প্রিন্টিং প্রেস। উপজেলা সদর, জলদী, বাঁশখালী, পৌরসভা, চট্টগ্রাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত