জুম’আর নামায আদায় করতে ইতোমধ্যে বেশকিছু মসজিদে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই জুম’আর দিনে মসজিদের প্রায়ই ইমাম সাহেবের আলোচনা অগোছালো, অপ্রাসঙ্গিক এবং কিচ্ছাকাহিনী নির্ভর! ধর্মীয় আলোচনা হয় ঠিকই কিন্তু বিষয়ভিত্তিক আলোচনা না হওয়ায় অনেকে এখান থেকে কোন কিছুই রপ্ত করতে পারে না। অনেকে কী আলোচনা হয়েছে তারও কূলকিনারা খুঁজে পায় না। তখন আলোচনা, আলোচনার জায়গায় থেকে যায়।
মৌসুম ভিত্তিক বার্ষিক ওয়াজ মাহ্ফিলকে আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে বড় বড় ইসলামিক বক্তাদের দাওয়াত দিই। বিশাল প্যান্ডেল করে বড় আয়োজন করে মাহফিল করি। বড় বাজেটের এ মাহফিল বাস্তবায়ন হয় সর্বস্তরের সহযোগীতায়। এটাও একটি ভাল দিক। এখানে সমস্যা নেই, এটাও পজেটিভলি নিচ্ছি। তবে, জুম’আর নামাযে স্থানীয় মুসল্লীগণ উপস্থিত হয় উল্লেখযোগ্যভাবে। এদিন স্থানীয় মসজিদগুলোতে প্রাণবন্ত আলোচনা হলে সাধারণ মুসল্লীগণ খুব সহজভাবে গভীর মনযোগের সাথে আলোচনা শ্রবণ করতে সক্ষম হবে। এ আলোচনা সহজে রপ্ত করে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
এখানে আমার মোদ্দা কথা হলো- আমাদের স্থানীয় মসজিদগুলোতে প্রতি জুমাবার অন্তত একজন ইসলামিক স্কলার দিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক। যিনি অবান্তর, ফাউ, কিচ্ছাকাহিনী বলে সময় নষ্ট করবে না। জ্ঞানগর্ব ও সূত্রনির্ভর আলোচনার মূল নিয়ামক হচ্ছে একজন ধর্মীয় স্কলার। এই ব্যবস্থার প্রতিপলন হোক দেশের সর্বত্র। এতে জুম’আর দিন ইসলামিক স্কলার থাকলে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানগর্ব আলোচনা শুনতে পারবে সাধারণ মুসল্লীরা। আলোচনা অনেকেই করে, কিন্তু কোরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা, রেফারেন্স দিয়ে আলোচনা করতে একজন ইসলামিক স্কলারের কোন বিকল্প নাই।
আমাদের মসজিদ গুলোকে আরও বেশী ঢেলে সাজাতে, দ্বীনের প্রচারকে প্রসার করতে অন্তত প্রতি জুমাবার ইসলামিক স্কলার দিয়ে আলোচনা করার ব্যবস্থাটা সামাজিকভাবে বাস্তবায়ন হোক। আমার মনে হয় এতে সমাজে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রভাব বিস্তার হবে খুব সহজে এবং অনায়াসে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের সবার আগে এগিয়ে আসা চাই।
এদিন সমাজে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া নানা অসংগতি নিয়ে, যৌতুক প্রথা নিয়ে, অতিরিক্ত কাবিন প্রথা নিয়ে, সুদগ্রহণ নিয়ে, ঘুষ দেওয়া-নেওয়া নিয়ে, সীমা লঙ্গন ও সম্পদ আত্মসাৎ এর পরিণতি নিয়ে, ইয়াতিমের হক নষ্ট নিয়ে, সন্তান প্রতিপালন ও পরিচালনা নিয়ে, পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিশদভাবে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানগর্ব আলোচনা হলে মৌসুমভিত্তিক বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের ট্রাডিশন দিয়ে যে ভূমিকা রাখা সম্ভব না তার চেয়ে বেশী ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে জুম’আর নামাযে সমবেত মুসল্লীদের নিয়ে আলোচনা করার ফলে।
আসুন, জুমা’আর দিনটাতে প্রতিটি মসজিদে অন্তত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানগর্ব আলোচনা করে এমন স্কলার দিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করি।
আর হ্যাঁ, পাঁচ ওয়াক্ত আযান দেওয়া মোয়াজ্জিন ও নামাযের ইমামতি করা ইমাম সাহেবদের সম্মানির বিষয়টিও আমাদের গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। অনেক মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন যথাযথ সম্মানি পায় না, ন্যুনতম যা সম্মানি পায় তার বেশীরভাগই বকেয়া রাখে সমাজের একশ্রেণীর মসজিদ পরিচালনা কমিটি। মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনের গুরুত্ব কতটুকু সেটা বুঝানোর মতো এদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা না থাকায় এদেশের মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন সবচেয়ে বেশী নিগৃহীত হয়। এদের যে সম্মানি দেওয়া হয় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে না ভালভাবে। একবারও এদের বিষয়ে আমরা গভীরভাবে ভাবিনি।
আমাদের যে মসজিদ পরিচালনা কমিটি হয়, সে মসজিদ কমিটিতে অন্তত একজন বিজ্ঞ আলেম অথবা বিকল্প ধর্মীয় জ্ঞান-বোধ সম্পন্ন ব্যক্তিকে পদায়ন করা হোক। শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি রাখা হোক। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে সম্পৃক্ত করা হোক। সমাজের বিশিষ্ট গুণীজনদের মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে রাখা হোক। প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করা হোক। এতে যেমন কমিটির ভিত্তি মজবুত হবে, তেমনি সুন্দরভাবে আর্থিক সমস্যা ছাড়া মসজিদ পরিচালিত হবে। তবে, এসব কমিটির স্বচ্ছতার জন্য জবাবদিহিতাকে প্রধান্য দিতে হবে।
মাদকের নেশায় রাতে বুদ হওয়া আর দিনে সাধুভাব ধারণ করা, সমাজের সুদিমহাজন, চোর, পরহক নষ্টকারী, অসৎ চরিত্রের লোকদের পবিত্রতম দায়িত্ব মসজিদ পরিচালনা কমিটি থেকে যোজন যোজন দূরে রাখুন। এদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশী হেনস্থার শিকার হয় ইমাম-মোয়াজ্জিন।
লেখক : শিব্বির আহমদ রানা, গণমাধ্যমকর্মী, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।
প্রকাশক ও সম্পাদক : শিব্বির আহমদ রানা, ফোন নম্বর: ০১৮১৩৯২২৪২৮, 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐛𝐚𝐧𝐬𝐡𝐤𝐡𝐚𝐥𝐢𝐬𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐩@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
অস্থায়ী ঠিকানা: স্মরণিকা প্রিন্টিং প্রেস। উপজেলা সদর, জলদী, বাঁশখালী, পৌরসভা, চট্টগ্রাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত