গ্রাম্য রাজনীতি আর পরকীয়ার চরিত্রের মাঝে বিস্তর সাদৃশ্য। যেভাবে পরকীয়ায় সম্পর্কের নামে ঘটে চরিত্রহনন, ঠিক তেমনই গ্রামীণ রাজনীতিতে আদর্শের নামে চলে অসাধুতা, প্রতিহিংসা আর নোংরামি।আজকের গ্রাম্য রাজনীতি যেন নীতিহীন কিছু মানুষের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
এখানে নেই রাজনৈতিক দর্শন, নেই আদর্শচর্চা। শুদ্ধ রাজনীতির বদলে রাজনীতির নামে চলে ব্যক্তি আক্রমণ, চরিত্র হননের প্রতিযোগিতা। উঠতি কিছু ‘ছবিবাজ’ তরুণ এবং ‘ভারসম্যহীন নেতা’র আবির্ভাবে রাজনীতি আজ শুধুই বাহারি ব্যানার-পোস্টারে সীমাবদ্ধ। যে দল বা মতকে তারা অনুসরণ করে, তাদের গঠনতন্ত্র, আদর্শ বা রাজনৈতিক নীতিমালা সম্পর্কে কোনো ধারণা তাদের নেই। এরা কেবল ছবি তুলে, পোস্ট শেয়ার করে নিজেদের ‘নেতা’ প্রমাণ করতে ব্যস্ত।
ছবির রাজনীতি। আজ গ্রামে রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত মাধ্যম—ছবি। কে কার পাশে দাঁড়িয়েছিল, কে কার সঙ্গে বসেছিল, কোন অনুষ্ঠানে কার সঙ্গে কার ছবি উঠেছে—এসব নিয়েই চলে চুলছেঁরা বিশ্লেষণ। ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ে, জানাজা বা সামাজিক প্রোগ্রামে কারো উপস্থিতি এখন রাজনীতির ‘ক্রাইম সিন’। একটি নিরীহ ছবি থেকেও তৈরি করা হয় ষড়যন্ত্রের গল্প—কে রাজাকার, কে দালাল, কে দোসর ‘অপর পক্ষ’—এসব তকমা দিতে বসে যায় ছবিবাজ বিশ্লেষকরা।
ছবির পেছনে আদর্শ বা প্রেক্ষাপট বিবেচনা করার মানসিকতা নেই এই অপরাজনীতির হোতাদের। এরা ছবি বাণিজ্য করে আলোচনায় আসতে চায়, অথচ নিজেদের কোন রাজনৈতিক নৈতিকতা বা সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই।
গ্রামের মানুষ মানে পরিবার, সমাজ, পাড়া-প্রতিবেশী মিলেমিশে এক আত্মীয়তাসূত্র। রাজনীতি হওয়া উচিত সেই ঐক্য ও কল্যাণকে ঘিরে। কিন্তু বর্তমান গ্রামীণ রাজনীতিতে যারা হঠাৎ করে নেতা হয়ে ওঠে, তাদের উদ্দেশ্য শুধুই বিভাজন সৃষ্টি করা। তারা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানেও ঢুকে পড়ে বিভাজনের বিষ। কে কার পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটাকেই বানিয়ে ফেলে রাজনৈতিক অস্ত্র।
সমাধান কোথায়? যতদিন না আমরা আদর্শকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে পারছি, ততদিন এই ভিলেজ পলিটিক্স এক ভয়াবহ সামাজিক সমস্যায় পরিণত হবে। মাঠের কর্মী আর ব্যানারের কর্মীর পার্থক্য না করতে পারলে, নেতৃত্ব আসবে ভ্রান্ত হাতের দখলে।
ছবির ফ্ল্যাশ নয়, আদর্শের আলোয় নেতৃত্ব বাছুন। কে কোন সময় কোথায় ছিল, কার সঙ্গে ছবি তুলেছে তা নয়—দেখুন, তার অবস্থান কী? চিন্তাধারা কী? নৈতিকতা কোথায়?
লেখক- শিব্বির আহমদ রানা
সমাজকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: shibbirahmed90@gmail.com
প্রকাশক ও সম্পাদক : শিব্বির আহমদ রানা, ফোন নম্বর: ০১৮১৩৯২২৪২৮, 𝐄-𝐦𝐚𝐢𝐥: 𝐛𝐚𝐧𝐬𝐡𝐤𝐡𝐚𝐥𝐢𝐬𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐩@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
অস্থায়ী ঠিকানা: স্মরণিকা প্রিন্টিং প্রেস। উপজেলা সদর, জলদী, বাঁশখালী, পৌরসভা, চট্টগ্রাম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত